তামিম আদ দারি (রা.) একবার নৌ-ভ্রমণকালে একটা দ্বীপে গিয়ে ওঠেন এবং সেখানে ‘জাসসাসাহ’ (দাজ্জালের গোয়েন্দা) ও দাজ্জালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের সঙ্গে অনেক বিষয়ে মতবিনিময় করেন। আবু দাউদ ও মুসলিম শরিফের একাধিক বর্ণনার আলোকে এখানে তা উল্লেখ করা হলো—

ফাতিমা বিনতে কাইস (রা.) বলেন, একদিন রাসুল (সা.) ইশার নামাজে আসতে বিলম্ব করলেন। বিলম্বের কারণ উল্লেখ করে ইরশাদ করলেন, তামিম আদ দারি থেকে দ্বীপস্থ এক ব্যক্তি অর্থাৎ দাজ্জালের কথা শুনতে গিয়ে একটু বিলম্ব হয়ে গেল।

এরপর তিনি নামাজ পড়ালেন।

নামাজ শেষে হাসিমুখে মিম্বরে উঠে বসলেন এবং সব মুসল্লিকে নিজ নিজ স্থানে বসে থাকতে বলেন। এরপর ইরশাদ করলেন, তোমরা কি জানো, আমি কী জন্য তোমাদের বসতে বলেছি? সাহাবায়ে বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল এ সম্পর্কে ভালো জানেন। ইরশাদ করলেন, কোনো ওয়াজ-নসিহতের জন্য নয়; শুধু তামিম আদ দারি থেকে শ্রুত একটি ঘটনা শোনানোর জন্যই তোমাদের একত্র হতে বলেছি।

তা হলো—
তামিম আদ দারি ছিল একজন খ্রিস্টান। সে এসে মুসলমান হয়েছে। আমি এর আগে দাজ্জাল সম্পর্কে তোমাদের যা বর্ণনা দিয়েছি, সে অনুরূপ বর্ণনা দিয়েছে। সে বলেছে, সে একবার ‘লাখাম’ ও ‘জুজাম’ গোত্রের ৩০ জন লোকের সঙ্গে জাহাজযোগে সমুদ্র ভ্রমণে বের হয়। দীর্ঘ এক মাস সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গমালার মধ্যে জাহাজটি তাদের নিয়ে গেল একটি দ্বীপের কাছে। এরপর তারা জাহাজের নঙ্গর ফেলে ছোট ছোট নৌকাযোগে ওই দ্বীপে প্রবেশ করে।

দাজ্জালের গোয়েন্দা : দ্বীপে নামতেই তারা দেখতে পেল বিপুল চুল ও পশমবিশিষ্ট এক অদ্ভুত প্রাণী। অন্য বর্ণনামতে, দীর্ঘকেশী এক রমণী। তার পুরো দেহ ছিল কেশে ভরা। তারা বিস্মিত হয়ে বলল, তুমি ধ্বংস হও, কে তুমি? সে বলল, ‘আমি জাসসাসাহ (গোয়েন্দা)’। তারা বলল, জাসসাসাহ আবার কী? সে বলল, এই যে দেখা যায় একটা প্রাসাদ, সেখানে যাও। তাতে অবস্থান করছে এক ব্যক্তি, যে তোমাদের জন্য গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তার এ কথার পর আমরা শঙ্কিত হয়ে পড়লাম, সে আবার শয়তান (জিন-ভূত) কি না!

দাজ্জালের সঙ্গে সাক্ষাৎ : আমরা খুব দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করলাম এবং ওই প্রাসাদে প্রবেশ করলাম। সেখানে গিয়ে দেখি মজবুত শিকলে বাঁধা আরো অদ্ভুত ও বৃহদাকৃতির এক মানুষ, যে তার নিজের মাথার চুল ধরে টেনে ছিঁড়ছে। এমন বৃহদাকৃতির মানুষ এবং এত মজুবত শিকলের বন্ধন এর আগে আমি কখনো দেখিনি। লোহার শিকলে দুই হাঁটুর মধ্য দিয়ে উভয় হাত ছিল ঘাড়ের সঙ্গে বাঁধা। তাকে বললাম, তুমি ধ্বংস হও, কে তুমি? সে বলল, তোমরা আমার কিছু না কিছু পরিচয় তো পেয়ে গেছ। অপর এক বর্ণনামতে সে পরিষ্কার করে বলল, ‘আমি দাজ্জাল’।

নানা বিষয়ে দাজ্জালের জিজ্ঞাসা : এরপর দাজ্জাল তাদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করল। প্রথমে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা নিজেদের পরিচয় ও সফরের অবস্থা খুলে বলল। অতঃপর দাজ্জাল বলল, তোমরা আমাকে বাইসানের খেজুর বাগানের কথা বলো; তাতে খেজুর ফলে কি? তারা বলল, হ্যাঁ! ফলে। সে বলল, সে দিন বেশি দূরে নয়, যেদিন এগুলোতে ফল ধরবে না। তারপর সে বলল, আচ্ছা! তবারিয়্যা সাগরের ব্যাপারে আমাকে অবগত করো; তাতে পানি আছে কি? তারা বলল, সেখানে প্রচুর পানি আছে। অতঃপর সে বলল, সেদিন বেশি দূরে নয়, যখন ওই সাগরে পানি থাকবে না। সে আবার বলল, জুগারের ঝরনার ব্যাপারে আমাকে অবহিত করো; তাতে পানি আছে কি না এবং সে এলাকার মানুষ তার পানি দ্বারা চাষাবাদ করে কি না? তারা বলল, এতে অনেক পানি আছে এবং সে এলাকার মানুষ তার পানি দ্বারা চাষাবাদও করে। সে আবার বলল, তোমরা আমাকে উম্মিদের নবীর ব্যাপারে বলো। তিনি এখন কী করছেন? তারা বলল, তিনি মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় চলে এসেছেন। সে জিজ্ঞেস করল, আরবের মানুষ তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে কি? তারা বলল, হ্যাঁ! করেছে। সে বলল, তিনি তাদের সঙ্গে কী আচরণ করেছেন। তারা বলল, তিনি আরবের পার্শ্ববর্তী এলাকায় জয়ী হয়েছেন এবং তারা তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছে। সে বলল, বশ্যতা স্বীকার করে নেওয়াই জনগণের জন্য কল্যাণকর ছিল।

মক্কা-মদিনায় দাজ্জালের প্রবেশ নিষিদ্ধ : (দাজ্জাল বলল,) এখন আমি নিজের ব্যাপারে তোমাদের বলছি। আমি মাসিহ দাজ্জাল। শিগগিরই এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অনুমতি পেয়ে যাব। বাইরে গিয়ে আমি সমগ্র ভূপৃষ্ঠ প্রদক্ষিণ করব। ৪০ দিনের ভেতর এমন কোনো জনপদ থাকবে না, যেখানে আমি প্রবেশ না করব। তবে মক্কা ও তাইবাহ (মদিনা) এ দুটি স্থানে আমার প্রবেশ নিষিদ্ধ। যখন আমি এ দুটির কোনো একটিতে প্রবেশের ইচ্ছা করব, তখন এক ফেরেশতা উন্মুক্ত তরবারি হাতে নিয়ে সম্মুখে এসে আমাকে বাধা দেবে। এ দুটি স্থানের সকল প্রবেশ পথে ফিরেশতাদের পাহারা থাকবে।

বর্ণনাকারী বলেন, তখন রাসুল (সা.) তাঁর ছড়ি দ্বারা মিম্বরে আঘাত করে বললেন, এ হচ্ছে তাইবাহ, এ হচ্ছে তাইবাহ, এ হচ্ছে তাইবাহ। অর্থাৎ তাইবাহ অর্থ এ মদিনাই। সাবধান! আমি কি এ কথাগুলো এর আগে তোমাদের বলিনি? সাহাবায়ে কেরাম বলেন, হ্যাঁ! বলেছেন।

রাসুল (সা.) ইরশাদ করলেন, তামিম আদ দারির কথাগুলো আমার খুবই ভালো লেগেছে। যেহেতু তা আমার ওই বর্ণনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা আমি তোমাদের দাজ্জাল, মদিনা ও মক্কা সম্পর্কে এর আগে বলেছি।

সে দ্বীপটি কোথায়? এরপর ইরশাদ করলেন, জেনে রেখো! এই দ্বীপ সিরিয়া সাগরে অথবা ইয়েমেন সাগরের পার্শ্বস্থ সাগরের মাঝে অবস্থিত, যা পৃথিবীর পূর্ব দিকে অবস্থিত, পৃথিবীর পূর্ব দিকে অবস্থিত, পৃথিবীর পূর্ব দিকে অবস্থিত। এ সময় তিনি নিজ হাত দ্বারা পূর্ব দিকে ইশারাও করলেন। বর্ণনাকারী ফাতিমা বিনতে কাইস (রা.) বলেন, এ হাদিস আমি রাসুল (সা.) থেকে সংরক্ষণ করেছি। (মুসলিম : ২/৪০৪-৪০৫; আবু দাউদ : ২/৫৯৪-৫৯৫)

কলমকথা/বিসুলতানা